শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি

দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি

ভণ্ডরা

কবি শেখ হাবিবুর রহমান বাবু

ভণ্ডরা ভাল কাজের ভান করে–কথিত আছে ভণ্ড নবী মুসাইলামা কাজজাবের প্রথমে ভাল কাজ করত,মাদ্রাসার মুফতি মোহাদ্দেস ছিল,যদিও সে কথা বলতে পারত কিন্তু সে বোবা সেজে ইশারায় অনেক কিছু ব্যাখ্যা করত!সে একজন যাদুকর ছিল। একদিন সে ভণ্ডনবী ঘুম থেকে চিৎকার করে গলা ফাঁটিয়ে বলল,”আমার কাছে আল্লাহর ওহী এসেছে! ওহী এসেছে!” অনেকেই তাৎক্ষণিক ভাবে বিশ্বাস করতে লাগল–কারণ সবাই জানত সে বোবা,এখন সে কথা বলতে পারছে,এই ভাবে ভণ্ডরা নিজের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার আগ পর্যন্ত খুব ভালকাজের ভান করে,দান খয়রাত করে, অন্যের কাজ থেকে দান সংগ্রহ করে গরীব মিসকিন ইয়াতিমদের সাহায্য করে কিন্তু আড়ালে লুকিয়ে থাকে অসৎ উদ্দেশ্য!

আরও পড়ুন: আগাম শীতে লেপ তোষক কারিগররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে

এদেশে এমন অনেক এনজিও এবং মানবাধিকার সংগঠন গজিয়ে উঠেছে যারা কিছু লোক দেখানো ভাল কাজ দিয়ে,ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী এবং তাদের সন্তানেরা দেশকে পিছনে ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। এ দেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা মানুষের মন জয় করার জন্য ইহুদী ভন্ডদের মত লোক দেখানো কাজ করে কিন্তু আড়ালে লুকিয়ে থাকে অপকর্ম, এই ক্ষেত্রে ভন্ড ইহুদীর অপকর্মের কাহিনী অনেক মানুষই জানে– নবীর দেহ মুবারক চুরির জন্য যে ভন্ড ইহুদীরা রওজা মুবারকে আস্তানা পেতে ছিল তারাও ফরহেজগার হয়ে ঘুরে বেড়াত।নামাজ পড়ত,দান সদকা করে মানুষের মনজয় করতে চেষ্টা করেছিল।কিন্তু বিশ্বমানবতার মুক্তির মহান দূত নবী করিম (স:)এর দেহমুবারকের কাছ পর্যন্ত যখন সুড়ঙ্গ করে পৌঁছে গেল তখন তিঁনি তখনকার সুলতান নুরুদ্দীন জাংকীকে স্বপন দেখালেন যে,”দুই ভণ্ড ইহুদী নাসারা আমার দেহ মুবারক চুরি করতে আসছে।আমাকে ওদের বিরক্তি থেকে রক্ষা কর!” কিন্তু সুলতান এই স্বপ্ন দেখে হতবিহবল হয়ে নামাজ আদায় করেন,পরপর তিন বার একই স্বপ্ন দেখে প্রাসাদ থেকে বের হয়ে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই স্বপ্নের কথা ব্যাখ্যা করলে তার পরামর্শে ১৬হাজার অশ্বারোহী যোদ্ধা সৈন্য আর বিপুল পরিমাণ রসদ নিয়ে ১৫দিন পর বাগদাদ থেকে মদীনায় পৌঁছে মদীনাকে অবরুদ্ধ করে রাখলেন। তারপর সকল মদীনাবাসীকে কয়েকদিন ধরে রাজকীয় খানাপিনা দিলেন কিন্তু সেই দুই নীল চোখওয়ালা ভন্ড ইহুদীকে পাচ্ছে না দেখে অস্থির হয়ে ঘোষণা দিলেন যে, এখনো কিছু লোক বাকি আছে! লক্ষাধিক লোকের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলেন,হুজুর দুইজন ফরহেজগার আল্লাহর বান্দা যারা শুধু দান সদকা করেন,এতিমদেরকে ব্যাপক সাহায্য করেন,সারা দিন নামাজ রোজা, উমরা,তসবি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন,তার শুধু অন্যকে দান করে,খাওয়ায়, তারা অন্যের খাবার খায় না।

নুরুদ্দীন (র:)দ্রুত তাদের আস্তানায় গিয়ে দেখল যে তার স্বপ্ন দেখা নীল চোখের ইহুদী এই দুজনই। কিন্তু তাদের ঘর শুধু কিতাব আর গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বই,আর মালামাল। নুরুদ্দীন কিছুই বুঝতে পারছেন না,তিনি রাগে লাল হয়ে উঠলেন,এ দিকে সকলেই এ দুই ভণ্ডের পক্ষে সাফাই গায়তে লাগলে নুরুদ্দীন ইতস্তত হয়ে এবার দুই ইহুদীকে কিছু জিজ্ঞাস করলেন,তারা বলল,”হুজুর আমরা নবী প্রেমিক মানুষ, আমরা নবীর কাছেই থাকতে চাই!” সুলতান নুরুদ্দীন এবার তাদের নামাজের মুসাল্লা সরাতে বললেন,মুসাল্লার নীচে চাটাই, তার নিচে বিশাল পাথর,পাথর সরিয়ে দেখল বিশাল গর্ত একেবারে নবীর দেহ মুবারকের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
এবার তাদের আসল বয়ান বের করা হল,তারা ইহুদীদের দ্বারা ধর্মীয় শিক্ষার উপর দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করল,ইহুদীরা তাদেরকে ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও ধন সম্পদ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নবীর রওজা পাকের সাথে নিরাপদ আস্তানা ঘেরে মদীনার গরীব দু:খিদের দান খয়রাত করে তাদের মন জয় করেই ফেলেছিল!এ দুই ভণ্ড ইহুদীকে মদীনাবাসীদের সামনে বিশাল মঞ্চ তৈরি করে জনতার রায়ে দৃষ্টান্তমূলক মৃত্যু দিল। পরবর্তীতে নবীজীর রওজা মুবারক কয়েক টন সীসা দিয়ে সুরক্ষা করে দিলেন যাতে আর কোন ভণ্ডরা নবীজীর রওজা পাকের কাছাকাছি যেতে না পারে।

আলোচার প্রাসঙ্গিকতা:-
এদুই ভন্ড ইহুদীর মত কিংবা ভন্ড নবীদের মত করে এদেশে জামাত শিবির জঙ্গিরা,তাদের মদদে ও অর্থায়নে নানা সংগঠনের রূপে আমাদের দেশে জনগণের মনজয় করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করতে তৎপর।হলি আর্টিজানে যে জঙ্গি হামলা করেছিল সেটা ছিল জামাত শিবিরের একটা টেস্টকেইস।জামাত শিবির এবং তাদের পৃষ্টপোষকরা আজ আওয়ামীলীগ সরকারে বিরুদ্ধে নানা গুজব ছড়িয়ে দেশের সাধারণ জনগণকে আওয়ামী বিরোধী করার চেষ্টা করছে,এ ভণ্ড স্বাধীনতা বিরোধীরা জানে এদেশে যতদিন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকবে ততদিন তারা দেশকে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান বানাতে পারবে না!
এভণ্ডদের সংখ্যা দিনদিন দেশে বিরাট আকার ধারণ করছে,তারা এখন নতুন একটা প্রজন্মকে ফেইসবুকে, অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামিয়েছে যারা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদেরকে গালিদেয়,দালাল,চামচা বলে ফেইসবুক গরম করে দেয়,তারা হায়েনার মত অনলাইনে আওয়ামীলীগ তথা স্বাধীনতাকে নিয়ে নানা ব্যঙ্গ করছে,টিকটক বানিয়ে সরকারের প্রতিটি উন্নয়নকে নিয়ে ট্রল করছে,নিত্য মাংস খাওয়া,ইলিশ খাওয়ার ওজুহাতে নতুন বাসন্তী নাটক করার অপচেষ্টা করেই যাচ্ছে,সেই ভণ্ড নবীরা,সেই ইহুদীরা যেভাবে কিছু মানুষকে তাদের দলে ভিরাতে পেরেছিল বর্তমান স্বাধীনতা বিরোধী, উন্নয়ন বিরোধীরাও দেশে বিদেশে তাদের পক্ষে জনমত গঠন করার জন্য কিছু লোককে প্রস্তুত করতে পেরেছে–যেমন ইহুদী মুসাদের টাকা খেয়ে ভিপি নুর নামক এক যুবক দেশে যুবধিকার নামে কোটাবিরোধী আন্দোলন করে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করার সাহস দেখিয়েছিল,পরে তারাই দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সম্প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্ত করতে উন্নয়ন ও স্বাধীনতা বিরোধীরা এবার তথাকথিত শান্তিতে নোবেল পাওয়া ড. ইউনুসকে বেছে নিয়েছে–যিনি কখনো দেশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, একুশেফেব্রুয়ারি,৭মার্চ,২৬শে মার্চ,১৬ডিসেম্বর এই অর্জনগুলো নিয়ে কোন দিন আনন্দ উদ্বেল হননি,শহিদ মিনার কিংবা স্মৃতিসৌধে একগুচ্ছ ফুল দেননি,কিংবা ১৫আগস্টে শোক প্রকাশ করেনি,কথিত আছে যে তিনি ডোনেশন এর মাধ্যমে হিলারী/ডেমোক্রেট লবিং দিয়ে নোবেল কমিটিকে প্রভাবিত করে শান্তিতে একটা বিতর্কিত পুরস্কার এনে দিল,যিনি তার সেই প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো পদ্মাসেতুর ঋণ বাতিলের জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল,বর্তমানে যিনি কর ফাঁকি ও শ্রমিক ঠকানোর মামলার আসামী –গরীবের রক্তচুষা সেই সুদী বর্গীরাজ ইউনুস সাহেব দেশের প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন আদালতের উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ করার জন্য বিশ্বের সাবেক নোবেলজয়ী ও কিছু সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের একটা বিবৃতি ভিক্ষা করে নিজের অপকর্ম থেকে বাঁচার পাঁয়তারা করে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি এবং তাদের দোসরদের ক্ষমতায় আনার গভীর ষড়যন্ত্রে মত্ত হয়ে আছে!

অন্যদিকে ক্ষমতা লোভী একটা জোট রাস্তার টুকায় থেকে শুরু করে ড.ইউনুস সাহেবের মত করফাঁকিবাজ,দুরুন্ধর, চতুর বকধার্মিকের কাঁধে ভর করে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত! কিন্তু তারা সবমানুষকে সবসময় বোকা বানাতে পারবে না–কারণ মহান স্বাধীনতার স্থপতি,জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে অর্জিত অমল স্বাধীনতা আর সোনার বাংলা গড়ার সোনালী সোপানকে অক্ষত রাখতে এখনো রয়েছে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি,মুক্তিযোদ্ধাদের পবিত্র রক্তের উত্তরাধিকারীরা। এতসব অপপ্রচার, গুজব, অগ্নিসন্ত্রাস, দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকে পদদলিত করে বাঙ্গালির আপন প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী, উন্নয়নের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক এক করে– পদ্মাসেতু,মেট্রোরেল,পাতাল সেতু,ফোরলেন হাইওয়ে,ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, ১৩লক্ষ গৃহহীনকে বাড়ি ও পাকাঘরের ব্যবস্থা,৫০ লক্ষ বয়স্ক, বিধবা,প্রতিবন্ধীকে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা,পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা,এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়ে,সমুদ্রবিজয়ের মাধ্যমে দেশের জলসীমা বৃদ্ধি, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই,আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধা,কম্পিউটার প্রযুক্তি, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক ভবন নির্মাণ,ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অত্যাধুনিক ৫৬৪টি মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ সহ দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি,মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নশীল তথা মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া,বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি(৭.৫৭ প্রায়)এবং ৩৫তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশে পরিণত করেছেন।কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়ে দেশকে খাদ্যঘাটতী থেকে মুক্ত করে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করেছেন,মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন!

২০০৬ সালে জামাত-বিএনপি সরকারের রেখে যাওয়া মাত্র ০.৭৬বিলিয়ন রিজার্ভএর স্থানে দেশের রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়নে উন্নতিকরণ যা করোনার ঘাত সহ্য করেও বর্তমানে একটা নিরাপদ জোনে রিজার্ভকে ধরে রাখতে সক্ষম  হয়েছে। তখনকার সরকারের রেখে যাওয়া মাত্র ৩৭৮৬মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থলে এখন সর্বোচ্চ ২৬ হাজার মেগাওয়াট( প্রায়) উৎপাদন ক্ষমতায় উন্নীত করণ করেছেন,রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তাবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে পারমাণবিক ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।কৃষক পাচ্ছে কমমূল্যে সার,কীটনাশক, বীজ সেচের সুবিধা সহ আধুনিক বায়োটেকনোলজির সুবিধা!
তাই দেশের মানুষকে ২০৪১ সালের মধ্যে  জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে  দেশি বিদেশি সকল ষড়যন্ত্রকে দলিত করে মানবতার মহান নেত্রী শেখ হাসিনাকে বার বার দেশ সেবার সুযোগ এনে দিতে হবে–অন্যতায় এই সোনার বাংলায় আবার নেমে আসবে সেই পুরনো শকুন,আমার সোনার বাংলা ভরে যাবে দেশি বিদেশি দালালের আলখাল্লায়!

লেখক : কবি,অর্থনীতির অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু গবেষক এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।

 

 

প্রতিদিনের কাগজ

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |